ভৌত জগতের প্রকৃতি (Nature of Physical World)

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ১ম পত্র | NCTB BOOK

আমরা যেখানে আছি, যে কারণে আছি, যা পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করছি বা আমাদের অনুভূতি বহির্ভূত যা কিছু অস্তিত্বশীল (ভর ও শক্তি) রয়েছে তাই জগৎ। জগতের এই ধারণা আমাদের ভৌত জগৎকে বুঝতে সাহায্য করবে। যে কোনো বিষয় সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হবার অর্থ তার অস্তিত্ব, আর অস্তিত্বের কারণ সম্পর্কে ধারণা দেয় সেই জিনিসের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য। 

জগতের শ্রেণিবিভাগ দুটি—একটি ভৌত জগৎ আর একটি জীব জগৎ। যার জীবন নেই, তা নিয়ে যে জগৎ তার নাম ভৌত জগৎ বা জড় জগৎ, যেমন ইট, পাথর, লোহা, সোনা, মাটি ইত্যাদি নিয়ে যে জগৎ তা হলো ভৌত জগৎ। আর জীবিত বস্তু নিয়ে যে জগৎ তা হলো জীব জগৎ, যেমন মানুষ, গরু, ছাগল, গাছ-পালা ইত্যাদি নিয়ে জীব জগৎ।

আর এসব ভৌত অংশ নিশ্চয়ই ভৌত জগৎ। ভৌত জগৎ মূলত চারটি উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি। সেগুলে হলো : (১) স্থান, (২) কাল (সময়), (৩) ভর এবং (৪) শক্তি। 

প্রথম দুটি তাত্ত্বিক হওয়ায় ভৌত জগতকে ভর ও শক্তির উপস্থিতি দ্বারাই বুঝান হয় (আইনস্টাইনের বিখ্যাত সূত্র E = mc2)। এক্ষেত্রে ভর ও শক্তি একই সূত্রে গাঁথা। ভৌত জগৎকে তিন উপাদানের সমন্বয় বলে প্রচার করা হয় অর্থাৎ ভর ও শক্তিকে আলাদা দুটি উপাদানে না রেখে একত্রে শক্তি লেখা হয়। ভৌত জগৎ বিশাল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই মানুষ তা উপলব্ধি করেছে। তাইতো বৈজ্ঞানিক সূত্রগুলোকে চিরন্তন সত্য বলা যায় না। কারণ বর্তমান বৈজ্ঞানিক সূত্র কোনো ভৌত বিষয়কে ব্যাখ্যা করতে না পারলে নতুন সূত্র দাঁড় করাতে হয়। উদাহরণস্বরূপ গ্যালিলিও রূপান্তরকে পরিবর্তন করে লরেঞ্জ রূপান্তরে পরিণত করতে হয়েছে। ভৌত জগতের বৈচিত্র্য উপলব্ধি করার দুটি সুন্দর উপায় রয়েছে। এক ভৌত জগতকে ক্ষুদ্রতর হতে ক্ষুদ্রতরভাবে দেখা, দুই ভৌত জগতকে বৃহত্তর হতে বৃহত্তরভাবে দেখা। ক্ষুদ্রতরভাবে লেখার অর্থ হলো- কোনো বস্তুকে ভেঙ্গে পেলাম অণু, অণুকে ভেঙ্গে পেলাম পরমাণু। আবার পরমাণুকে ভেঙ্গে পেলাম স্থায়ী ও অস্থায়ী কণিকা, কণিকাকে ভেঙ্গে কোয়ার্ক, কোয়ার্ককে ভেঙ্গে শক্তিগুচ্ছ আরও কত কী। শুধু তাই নয়, এর প্রত্যেকটি অংশের আবার বহু শ্রেণি রয়েছে। বৃহত্তর দিক হতে ভাগ বলতে বোঝায় উপগ্রহ, গ্রহ, সৌর জগতের মতো জগৎ ছায়াপথ, আরও বৃহত্তর কত কী। ভৌত জগতে আরও রয়েছে ব্ল্যাকহোল যা হতে আলোক পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না। অনুমান করা হয় এক বৃহৎ ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে বৃহৎ ছায়াপথগুলো ঘুরছে। ভৌত জগতের নানা বিষয়ের বিশেষ জ্ঞানের আলোচনাই ভৌত বিজ্ঞান।

আজ আমরা যে আধুনিক জীবন যাপন করছি তা ভৌত বিজ্ঞানেরই অবদান। জীববিজ্ঞানের অগ্রগতিরও দাবিদার ভৌত বিজ্ঞান। ভৌত বিজ্ঞানের অনেক শাখার মধ্যে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন শাস্ত্র, গণিত শাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূবিদ্যা প্রভৃতি অন্যতম। এসব বিজ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ ভৌত জগৎকে বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে সমগ্র ভৌত জগতের সকল পদার্থের মধ্যে মানুষ জানতে পেরেছে মাত্র 4% । উপরন্তু কপারনিকাস, গ্যালিলিও, রবার্ট বয়েল, স্যার আইজ্যাক নিউটন, ফ্রাংকলিন, জেমস্ ওয়াট, গ্যালভানী, ভোল্টা, ফ্যারাডে, অ্যাম্পিয়ার, ও'ম, মার্কনি, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, ওয়েরস্টেড, রনজেন, ডি-ব্রগলী, হাইজেনবার্গ, রাদারফোর্ড, হেনরী বেকেরেল, কুরী, মাদাম কুরী, মিলিক্যান, চ্যাডউইক, গ্লাশো ওয়েইনবার্গ, আব্দুস সালাম প্রমুখ যশস্বী বিজ্ঞানীদের অবদান ভৌত বিজ্ঞানের অমূল্য সম্পদ। সংক্ষেপে বলা যায় - বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের জীব সম্পদ ছাড়া সব কিছুই ভৌত বিজ্ঞানের দুর্ভেদ্য ভিত।

আমাদের উচিত ভৌত জগৎ নিয়ে গবেষণা করে আমাদের কৌতূহল মিটানো, ভৌত জগৎকে কল্যাণার্থে ব্যবহার করা এবং ভৌত জগতের সাথে সাথে জীব জগতের অস্তিত্বের কারণ সম্পর্কে জেনে সে অনুসারে জীবন পরিচালনা করা।

 

Content added || updated By
Promotion